বিশেষ প্রতিনিধি,নারায়ণগঞ্জ প্রতিদিন ডট কম ঃ বাসদ কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক কমরেড খালেকুজ্জামান বলেন, দেশের মানুষ আজ চরম সংকটে নিমজ্জিত। ক্ষমতাসীনদের মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনা থেকে সরে গিয়ে দেশ শাসনের ফলেই আজ জনগনের এই অবস্থা। বর্তমানে দেশের সকল পণ্যদ্রব্যের দাম হু হু করে বেড়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানী তেলের দাম দুই তৃতীয়াংশ কমলেও সরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির দাম বাড়িয়ে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে। যার ফলে দেশের ১৬ কোটি মানুষের পকেট থেকে বছরে কোটি কোটি টাকা বেড়িয়ে যাচ্ছে। যেগুলোর কিছু অংশ দোকানীদের পকেটে গেলেও বাকী টাকা যাচ্ছে লুটেরাদের পকেটে। এর সাথে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, দলীয় সন্ত্রাস, গোষ্ঠী সন্ত্রাস ও ব্যক্তি সন্ত্রাস পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। এ থেকে বুঝা যায় দেশে এখন লুটপাটের রাজত্ব চলছে। যেটা যে কোন সরকারের আমলেই চোখে পড়ে।
বাসদের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ৯৮তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) কর্তৃক আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। বাসদের জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাসের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন সিপিবির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাসদ নেতা অসিত বরণ বিশ্বাস, বাসদ জেলা ফোরামের সদস্য এবং শ্রমিক ফ্রন্টের জেলা সভাপতি আবু নাঈম খান বিপ্লব, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট জেলা সভাপতি সেলিম মাহমুদ।
প্রধান বক্তা আরো বলেন, জনগণ বর্তমানে দেশের ইলেকশন কমিশন, দুদক, বিচার বিভাগ থেকে তাদের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। কেন না সেখানে এখন সাধারণ মানুষের কোন অধিকার নেই। কিছুদিন পূর্বে রাষ্ট্রপতি বলেছিলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে গেছে। সকলেই এখন লুটপাটে ব্যাস্ত। দেশে এক বছরে যে টাকা দুর্নীতি হয়, তা দিয়ে একটি পদ্মা সেতু তৈরি করা সম্ভব। সুতরাং এতেই বুঝা যায় দেশের গণতন্ত্র আজ কোন পথে পরিচালিত হচ্ছে।
খালেকুজ্জামান আরো বলেন, দেশের উন্নয়ন নিয়ে এখন নানান দুর্নীতি চলছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যেখানে একটি ফেরলেন রাস্তা তৈরিতে খরচ হয় ১০ থেকে ১৮ লাখ টাকা, সেখানে এই দেশ একটি ফোরলেন রাস্তা করতে সরকারের খরচ হয় প্রায় ৬৯ লাখ টাকা। ১২’শ নদীর এই বাংলাদেশে বর্তশানে নদীর সংখ্যা ২০০টি। বাকীগুলো দখলদারদের দখলে চলে গেছে। লুটতরাজ করতে করতে তাদের মানষিকতা এখন এমন হয়েছে, এখন তাদের গরীব মানুষ দেখলেই ফুটবলের মত লাথি মারতে ইচ্ছে করে। অথচ যারা ভূমি দখলদার, তাদেরকে তারা তোষামোদ করে। সরকারী জমি, বন, নদী-খাল থেকে শুরু করে সকল কিছুই এখন তাদের দখলে চলে যাচ্ছে। যেই টাকা দিয়ে নিজেদের স্ত্রী ও আত্মীয় স্বজনের নামে তারা বিদেশ গিয়ে বাড়ি বানাচ্ছে, সুইজ ব্যাংকে একাউন্ট খুলছে। অথচ দেশের মানুষ হাহাকারে মরছে। সরকারী ব্যাংক থেকে জনগণের টাকা লুটে নিয়ে ব্যাংককে গিয়ে ব্যাংক বানাচ্ছে। আর সরকার তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থাই গ্রহন করছে না। যেটুকু করেছে, তা ওই প্রতারক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অতি নঘন্ন। অথচ ফুটপাতে বসে হকাররা ব্যবসা করতে গেলেই তাদের যত সমস্যা।
তিনি আরো বলেন, দেশের গণতন্ত্র আজ ফ্যাসিবাদী শাসনে নির্বাসিত। রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী, এমপিসহ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়লেও গার্মেন্টসসহ বেসরকারী খাতের সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়েনি। অথচ পে-স্কেল ঘোষনার সাথে সাথে জনগনের জীবন যাত্রার ব্যয় বহুগুন বেড়ে গেছে। সরকার জনগনের জানমালের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। একের পর এক গুম, হত্যা, খুনের বিচার না হওয়ায় জনগন হতাশ।
এসময় তিনি সকল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন ও কার্যকর করার প্রতি জোর দিয়ে তিনি আরো বলেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত জামাতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। যুদ্ধাপরাধীদের সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তা দিতে হবে। গত ৪৪ বছর ধরে শাসকগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের মৌল চেতনা থেকে সরে গিয়ে রাষ্ট্র শাসন করার ফলেই দেশে আজ চরম সংকট তৈরী হয়েছে।
এসময় তিনি এই পরিস্থিতি থেকে জনগণকে সড়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দেশকে নতুন ধারায় চলমান করতে হবে। আর সেই জন্য বিএনপি-আওয়ামী লীগ-জাতিয় পার্টিকে বাদ দিয়ে দেশের গণতন্ত্রের অধিকার আদায়ের লক্ষে তৃতীয় শক্তি গড়ে তোলতে হবে। সিপিবি-বাসদ ই হবে সেই শক্তি। যারা সব সময় জনগণের দাবী আদায়ের লক্ষে নিজেদের বিলিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন।
হাফিজ উদ্দিন তার বক্তব্যে বলেন, নারায়ণগঞ্জে গ্যাস লাইন নির্মানের সময় যেখানে ১’শ ৫০ বছরেও গ্যাস সংকট না দেয়ার প্রতি¯্রুতি দেয়া হয়েছিল, সেখানে মাত্র ৬ মাসেই গ্যাস নিয়ে টালবাহানা চলছে। তিতাস কর্মকর্তারা জনগণের সাথে প্রতারণা করছে। সারা দেশে অবৈধ গ্যাস সংযোগে ভরে গেলেও এর বিরুদ্ধে তারা কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
সেলিম মাহমুদ তার বক্তব্যে বলেন, অনেকেই বলে শ্রমিকরা নাকী লুটপাট করে। আমি তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, শ্রমিকরা কখনো লুটপাট করেনা, টাকা আত্মসাৎ করে না। উল্টো তাদের টাকা আত্মসাৎ করে আজ মালিকপক্ষ বড়লোক বনে গেছেন। অথচ শ্রমিকরা তাদের পাওনা চাইতে গেলেই তাদের যত মাথা ব্যথা। তখন তারা তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে সেই অসহায় শ্রমিকদের উপড় অত্যাচার নির্যাতন করে। আর শ্রমিকরা এর প্রতিবাদ করলেই সেটা হয়ে যায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড।
সভাপতির বক্ত্যবে নিখিল দাস বলেন, অনেকেই বলে বামদল নাকী ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে ব্যানার হাতে রাজপথে দাড়িয়ে পড়ে। যারা এইসব কথা বলেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বামদল কখনো ফটোশেসন করে নেতা সাজতে রাজপথে অবস্থান নেয় না। আমরা জনগণের দাবী আদায়ের লক্ষে রাজপথে অবস্থান নেই।
এসময় তিনি ভবিষ্যতে যেকোন আন্দোলন সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনগণকে তাদের পাশে থাকার আহ্বান জানান।
Leave a Reply